অনলাইন ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, শিক্ষকদের আন্দোলন এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটি মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন মাস বন্ধ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই সময়ের মধ্যে দেশে অনেককিছু বদলে গেছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে বিশবিদ্যালয়ের বিভিন্ন অঙ্গনেও। বিশ্ববিদ্যালয় খোলায় নিয়েও অনিশ্চয়তা ছিল। তবে সব অনিশ্চয়তা কাটিয়ে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ছিল বেশ প্রাণোচ্ছল। যদিও কয়েকটি বিভাগে এখনও শিক্ষার্থীদের বেশকিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে অসন্তোষের খবরও পাওয়া গেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক সময়ের মতোই।
দীর্ঘ সময় প্রাণহীন অবস্থায় থাকা কলাভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, আইবিএ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের প্রাঙ্গণ ছিল শিক্ষার্থীদের পদচারনাণায় মুখরিত ছিল সকাল থেকেই। ক্যাম্পাসের খাবারের দোকানগুলোতেও ছিল উপচে পড়া ভীড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোই ট্রিপ দিচ্ছে নির্দিষ্ট সময়মতো।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় ঢাবির রাজনৈতিক প্রাণকেন্দ্র মধুর ক্যান্টিনে অন্যান্য সময়ের মতো ভীড় দেখা যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যান্টিন হিসেবেই ব্যবহার করছেন এটিকে। ক্যাম্পাস শ্যাডো, মল চত্বরও ছিল শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত।
এরমধ্যে কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ক্লাস বর্জন করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় কঠোর অবস্থানের কারণে বাইরের লোকজনের আনাগোনা অনেকাংশেই কমে এসেছে।
তবে দীর্ঘ সময় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় নতুন করে সেশন জটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীদের অনেকে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তারেক রহমান মনে করছেন, সেশন জটে পড়লে চাকরির ক্ষেত্রে তিনি পিছিয়ে পড়তে পারেন। তারেক বলেন, ‘৩/৪ মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এখন শুনছি সেমিস্টারে ৬ মাসই ক্লাস হবে। এটাতে তো আমার মতো চাকরি প্রত্যাশীদের ক্ষতি হচ্ছে। ক্লাসটা ৪ মাসে কমিয়ে আনলে ভালো হতো।’
নিরাপত্তা নিয়েও অনিশ্চয়তায় আছেন কেউ কেউ। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তামিম দ্বিরা খান বলেন, ‘আমি আগে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আবার ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনও করেছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনকার পরিস্থিতি ঠিক নেই। মব জাস্টিসের নামে যা হচ্ছে, তাতে নিজেকে নিরাপদ বোধ করছি না।’
লম্বা সময় পর ক্যাম্পাসে ফিরে শিক্ষকদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তনও দেখছেন কেউ কেউ। মাস্টার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফারাহ জাহান শুচি বলেন, ‘অনেকদিন পর ক্লাসে আসতে পেরে ভালো লাগছে। ক্লাসের পরিবেশও বেশ ভালো। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারছে। শিক্ষকরাও অনেক ইতিবাচক মানসিকতা দেখাচ্ছেন। আন্দোলনের পর ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিয়ে একটা ভীতি ছিল। তবে এখানে সবকিছু ঠিকঠাকই মনে হচ্ছে।’
সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেক্টরের শিক্ষকদের মধ্যেও পরিবর্তন এসেছে। তাদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে প্রথম দিন এমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার কথা জানা যায়নি।
প্রথম দিন ক্লাস নেয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা এখন ক্লাসে কথা বলতে পারছে এটা অনেক ইতিবাচক। শিক্ষকরাও অনেকটাই নমনীয়। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এবং ব্যবহার বেশ ভালো ছিল। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের শঙ্কা বোধ করছি না। তবে অনেক বিভাগেই এখনও অনেক ঝামেলা চলছে বলে শুনেছি।’
ওই শিক্ষক আরও বলেন, ‘প্রায় ত্রিশোর্ধ্ব বিভাগ আছে যেখানে এখনও অভ্যন্তরীণ অনেক জটিলতা রয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়গুলো দ্রুতই সমাধান হওয়া উচিত। শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে তাদের দাবি-দাওয়া শোনা, তাদের সমস্যাগুলো জানা। বাকি বিভাগগুলোরও উচিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার আয়োজন করা।’
প্রথম দিনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে গিয়েছিলেন নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, আন্দোলনের ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্ট ট্রমা কাটাতে দ্রুতই পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘ছাত্র-শিক্ষক সবাই একটা কঠিন মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে এই পরিস্থিতিতে এসেছে। আমরা সেই শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার উত্তরণে কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিছু দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। সেটিও আমরা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
সূত্র : সময় টিভি