প্রফেসর ডা. আবদুল্লাহ শাহরিয়ার: শীতে শিশুর জ্বর কিংবা সর্দি-কাশি খুব সাধারণ একটি ঘটনা। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সিরাপ, নাক দিয়ে পানি পড়ার জন্য হিস্টাসিন বা অ্যালাট্রল এবং কাশির জন্য সালবিউটামল সিরাপ বয়স অনুযায়ী খাওয়ালে শিশু সুস্থ হয়ে ওঠে। অনেকের অবশ্য তা লাগেও না। লবণ পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার এবং বুকের দুধ ও পর্যাপ্ত তরল খাবার খাওয়ালেই ভালো হয়ে যায়। বাসক পাতার রস এবং মধু এ ক্ষেত্রে ভালো কাজে দেয়। শীতে শিশুর যে ধরনের সর্দি-কাশি হয়, তার বেশিরভাগই ভাইরাসজনিত। এগুলোয় তেমন অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো দরকার পড়ে না। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে শিশুর উপকারের চেয়ে ক্ষতি হতে পারে বেশি।
চিকিৎসকের কাছে যখন যাবেন : ঘরোয়া চিকিৎসায় বেশিরভাগ সর্দি-জ্বর ভালো হয়ে যায়। সর্দি বা জ্বরের বাইরে শিশু দ্রুত শ্বাস নিলে (নবজাতকের জন্য মিনিটে ৬০, ১ বছর পর্যন্ত ৫০, এরপর মিনিটে ৪০ বারের বেশি শ্বাস নিলে); বুক নিচের দিকে দেবে গেলে; টানা কয়েক দিন বেশি বেশি জ্বর থাকলে; খুব দুর্বল হয়ে পড়লে এবং খুব বেশি কান্নাকাটি করলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
বিপদ চিহ্ন : শিশু অচেতন হয়ে গেলে; খিঁচুনি হলে; কিছুই খাওয়ানো না গেলে বা যা কিছুই খাক, সঙ্গে সঙ্গে বমি করে ফেলে দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
পরামর্শ : শিশুর শ্বাসনালি অতি সংবেদনশীল। তাই শীতে হাঁপানির প্রকোপ বাড়ে। এ রোগ প্রতিরোধে বাসায়, শোবার ঘরে কার্পেট রাখবেন না। লোমযুক্ত চাদর, কম্বল ব্যবহার করবেন না। হাঁপানি নিরাময়ে সালবিউটামল সিরাপ এক বছরের নিচের জন্য আধা চামচ আর এক বছর থেকে পাঁচ বছরের জন্য এক চামচ করে দিনে তিনবার খাওয়াতে পারেন।
শিশুর ত্বক ও শ্বাসতন্ত্র নাজুক ও অপরিণত। তাই শিশু তাপ ধরে রাখতে পারে না। সহজে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এ সময় তাই তাকে পর্যাপ্ত শীতের কাপড় পরাতে হবে। তবে এর মানে এ নয়, শিশুকে নাক-মুখ বন্ধ করে, শক্ত করে মুড়িয়ে দিতে হবে। শীতের কাপড় যেন আরামদায়ক হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শীতে ঘাম কম হওয়ায় শিশুর প্রস্রাব বেশি হয়। এ জন্য নবজাতকের কাঁথা ভিজে যাচ্ছে কিনা বা একটু বড় শিশুর প্যান্ট ভিজছে কিনা, তা খেয়াল রাখতে হবে। অনেকে বেশি প্রস্রাব করছে দেখে শিশুকে বুকের দুধ ও তরল খাবার খাওয়ানো কমিয়ে দেন। এটি ভুল পদক্ষেপ, যা করা উচিত নয়। এতে কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।
শীতে শিশুর কোমল ত্বকের যত্নে অবশ্যই ভালো মানের লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। শুধু মুখে নয়, সারা শরীরে। শিশুকে পর্যাপ্ত সময় রোদে রাখতে হবে। শীতে গোসল করতে বাধা নেই। কুসুম গরম পানি দিয়ে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে পারেন। অনেকে গোসলের আগে সর্ষের তেল মাখিয়ে দেন। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, অবশ্য ক্ষতিও নেই। তবে গোসল করানোর সময় কানে যাতে পানি না ঢোকে, খেয়াল রাখতে হবে। শরীর ভালোভাবে মুছে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন ঋতুর মতো শীতেও শিশুর নানা রোগ হতে পারে, এটির বিশেষ কোনো ব্যাপার নয়। এ জন্য দুশ্চিন্তারও কারণ নেই।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, শিশু হৃদরোগ বিভাগ
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।
সম্পাদক : হালিমা খাতুন, নির্বাহী সম্পাদক : মুন্সি মোঃ আল ইমরান। MAA 23 Multimedia Limited এর পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৭৮/৪/ সি তৃতীয় তলা, কাজলা ব্রীজ-উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। ফোন ০২-২২৩৩৪২১৪১, মুঠোফোন : ০১৮১৭-৫৩০৯৫২, ০১৯৭৯-৭৯৯১৪৬। ইমেইল : dailybartomandeshsangbad@gmail.com
© All rights reserved © Maa 23 Multimedia Limited