নিজস্ব প্রতিনিধি: দাম বাড়ানোর পর গত পাঁচ দিনেও বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ ঠিক হয়নি। খুচরা দোকানগুলোতে এক-দুটি ব্র্যান্ড ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানির বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ করছেন না সংশ্লিষ্ট ডিলাররা। এতে সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ক্রেতাদের।
গতকাল শনিবার রাজধানীর হাতিরপুল, কাঁঠালবাগান, মোহাম্মদপুর টাউন হল ও কলমিলতা বাজারে খোঁজ নিয়ে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এসব বাজারের কোনোটিতেই দুটির বেশি ব্র্যান্ডের তেল পাওয়া যায়নি। যদিও স্বাভাবিক সময়ে বাজারে ছয়টির বেশি ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়।
একাধিক ভোজ্যতেল পরিশোধন কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা গত বুধবার থেকেই নতুন দরে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল ছাড়ছেন। তবে পাইকারি বাজারের ডিলাররা জানান, তাঁরা কোম্পানিগুলো থেকে দুই দিন ধরে স্বল্প পরিমাণে বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন। এ কারণে খুচরা বাজারেও সরবরাহ কম রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম অনেক দিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এ অবস্থায় ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলোও দেশে সয়াবিন তেলের দাম বাড়াতে চেয়েছিল। এ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা শেষে গত সোমবার সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়ায় কোম্পানিগুলো। ফলে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে হয় ১৭৫ টাকা, যা এত দিন ছিল ১৬৭ টাকা। তবে এর মধ্যেই বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেন ডিলাররা, যা দাম বাড়ার পরও ঠিক হয়নি।
হাতিরপুল বাজারের মুদিদোকানি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার পর্যন্ত নতুন দরের কোনো তেল আমরা পাইনি। শনিবার রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের অল্প কিছু তেল কিনতে পেরেছি। আর রোববার তীর ও পুষ্টির তেল দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ডিলাররা।’ তবে সয়াবিন তেল কিনতে চাইলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শর্ষে তেল, পোলাও চাল, নুডলস প্রভৃতি পণ্য রাখতে হয় বলে জানান এই বিক্রেতা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সয়াবিন তেলের প্রায় সব কটি ব্র্যান্ডের ডিলার রয়েছে। গতকাল বিকেলে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তীর, রূপচাঁদা, ফ্রেশ ও পুষ্টি—এই চার ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। তবে সব কটির ব্র্যান্ডেরই পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারে একটি ব্র্যান্ডের ডিলার নাম প্রকাশ না করে জানান, কোম্পানিগুলো তাঁদের কাছে এক-দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ডিলারদের কাছে সরবরাহ শুরু করেনি।
রাজধানীর কাঁঠালবাগান বাজারের পাশেই থাকেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মোহাম্মদ ইসমাইল। তিনি জানান, শনিবার ওই বাজারের চারটি মুদিদোকান ঘুরে কোথাও এক বা দুই লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল পাননি। দুটি দোকানে পাঁচ লিটারের বোতল ছিল। তবে সেটি কেনার মতো অর্থ তাঁর কাছে নেই। পরে তেল কিনতে পাশের আরেকটি বাজারে যান তিনি। মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘শুনেছি, কোম্পানিগুলো দাম বাড়ানোর জন্য সয়াবিন তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিল। এখন দাম বাড়ার পরও দোকানে গিয়ে তেল পাচ্ছি না।’
ঢাকার বাইরেও বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ কম। যেমন চট্টগ্রামের একাধিক বাজারে গতকাল ঘুরে এক ও দুই লিটার বোতলজাত সয়াবিন কম দেখা গেছে। সেখানকার বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে ডিলাররা তেলের পর্যাপ্ত অর্ডার নিচ্ছেন না। নগরের বহদ্দারহাট বাজারের এক দোকানি নাম প্রকাশ না করে জানান, বোতলজাত সয়াবিন তেলের চেয়ে খোলা সয়াবিনে লাভ বেশি কোম্পানিগুলোর। ফলে তাঁরা খোলা সয়াবিন তেলই দিচ্ছেন বাজারে।
ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী একটি কোম্পানির এক কর্মকর্তা জানান, বুধবার থেকে তাঁরা নতুন দরের বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করছেন। সারা দেশে সরবরাহ করার কারণে রাজধানীর মধ্যে সরবরাহ কিছুটা কম থাকতে পারে। তবে এ পরিস্থিতি দু-তিন দিনের মধ্যে ঠিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।