নিজস্ব প্রতিনিধি: আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে ভোটের সময়ের ব্যাপারে একটা ধারণা বা ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল। তারা বলেছে, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে নির্বাচনের তারিখের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচনের সময়ের প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায় তারা।
সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবির প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সময় নিয়ে কথা বললেন। দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যকে সাধুবাদ জানিয়েছে। কিন্তু দলটির নেতারা বলেছেন, সংস্কারে কতটা সময় প্রয়োজন বা ঠিক কবে নির্বাচন হবে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন মাত্র। কিন্তু তাতে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজনীয় কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার করা হবে, সে জন্য কতটা সময় প্রয়োজন, তা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট নয়। আমরা আশা করি, তিনি সংস্কারের সময় ও নির্বাচনের সময় সুনির্দিষ্ট করে একটি রোডম্যাপ দেবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মহান বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মহান বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেনছবি: পিআইডি
দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে সাধুবাদ জানালেও দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের দাবির কথা আবারও মনে করিয়ে দিয়ে রোডম্যাপ চেয়েছেন।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোও বলেছে, প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যে শুধু ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের সময় নিয়ে এখন যে ইঙ্গিত পাওয়া গেল, সেটা দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরিতে সহায়ক হবে। তবে এখন অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেওয়া হলে, তা স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিএনপির আরেক মিত্র ১২–দলীয় জোটের নেতারা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের চার মাস পার হওয়ার পর সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্বাচনের সময় নিয়ে বক্তব্য এল। কিন্তু তাতে সংস্কারের সময় বা নির্বাচনের তারিখ বলা হয়নি। এই জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এখন দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা প্রয়োজন। দলগুলোও তা দাবি করে আসছে। কিন্তু নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য এক বা দেড় বছরের কথা এসেছে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে। শাহাদাত হোসেন এ–ও বলেন, তাঁরাসহ অনেক দল ২০২৫ সালে জুনের মধ্যে নির্বাচন চায়। তাঁরা মনে করেন, সংস্কার করবে রাজনৈতিক সরকার।
বামপন্থী দলগুলোও নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেনি। এই দলগুলো সংস্কার এবং নির্বাচনের দিনক্ষণ দিয়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় নিয়ে একটা ধারণা দিয়েছেন, সেটা একটা সুখবর বটে। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি রোডম্যাপ তৈরি করা সম্ভব।
কোনো কোনো ইসলামি দলের প্রতিক্রিয়াতেও একই ধরনের অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কার ও নির্বাচনের সময় নিয়ে একটি রোডম্যাপ আশা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য তাঁরা পেলেন না। জামায়াতের এই নেতা বলেন, ভোটের একটা সম্ভাব্য সময়ের ইঙ্গিত দেওয়া হলো, সেটাও বলা হলো ভোটার তালিকা তৈরির শর্তে।
প্রধান উপদেষ্টা একটা ধারণা দিয়েছেন, নির্বাচন নিয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ আশা করে বিএনপি: সালাহ উদ্দিন আহমদ
নির্বাচনের ইঙ্গিত দেওয়ার ক্ষেত্রেও অন্তর্বর্তী সরকারের সংশয় প্রকাশ পেয়েছে মনে করে ইসলামী আন্দোলন। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ইসলামী আন্দোলনসহ অনেক দল সংস্কার শেষ করার পর নির্বাচন চায়। সেখানে মাঝপথে নির্বাচন করা হলে সংস্কার আর হবে না। রাজনৈতিক সরকার সংস্কার করবে না বলে দলটি মনে করে। আর সে কারণে ইসলামী আন্দোলন সংস্কারের আগে নির্বাচনের ইঙ্গিত দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সংশয় দেখছে।
রোডম্যাপ প্রশ্নে দলগুলো এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সঙ্গে সংলাপ আশা করছে। তারা বলছে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এরপর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে রোডম্যাপ তৈরি করা হলে সব সন্দেহ–সংশয় দূর হবে।