রাজশাহী সংবাদদাতা: কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে অনেক তরুন নিজেদের সফল উদ্যক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। এমনই এক তরুন রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের তরুন উদ্যোক্তা হানিফ মন্ডল। মাত্র কয়েক বছরে হয়ে উঠেন উপজেলার সবচেয়ে বড় কৃষি উদ্যোক্তা। মাল্টা, কমলা, বেদেনা চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের আম চাষেও হয়েছেন সফল। গড়ে তুলেছেন হানিফ মন্ডল এগ্রো ফার্ম এন্ড নার্সারী। সফল উদ্যোক্তা হওয়ায় সরকারের সর্বোস্তরের কর্মকর্তা, তরুন উদ্যোক্তাসহ সাধারন মানুষের ভিড় জমে হানিফের মাল্টা বাগানে।
উদ্যোক্তা হানিফ এর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৩৫ বছর যাবৎ তার বাবা আবুল কাশেম মানুষের কৃষি জমি লীজ নিয়ে রাজশাহী জেলার কয়েকটি উপজেলায় পেয়ারার চাষ করতেন। কলেজ ছাত্র অবস্থায় বাবার পেয়ারা বাগানে বেড়াতে যেতেন তিনি। এভাবেই বৃক্ষের প্রেমে পড়ে যান। আগ্রহী হয়ে পড়া লিখা শেষ করে চাকুরীর পিছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হানিফ তৈরী করেন এগ্রোফার্ম ও নার্সারী। এ নামকরনে ২০১৮ সালে উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের ফতেপুরে স্বল্প পরিসরে শুরু করেন মাল্টা ও কমলার চাষ। শুরুতে সাথি ফসল হিসেবে পেয়ার চাষ করেও সাফল্য পেয়েছেন। পরে পেয়ারা চাষ না করে বর্তমানে মাল্টা, কমলার পাশাপাশি বাগানে ৬৩ প্রজাতির আম, কদবেল, আপেল, স্ট্রবেরি, আমড়া, ডালিম ফলের চাষ করছেন তিনি।
কৃষিভিত্তিক কোন শিক্ষা না থাকলেও অভিজ্ঞ কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় জ্ঞান নিয়েছেন যা তার কৃষি উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করেছে। ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের বড় বড় কৃষি ফার্ম, অর্জন করেছেন প্রয়োজনীয় জ্ঞান যা এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান এনজিওদের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন, তবে সরকারীভাবে এখন পর্যন্ত কোন সহায়তা পাননি বলে তিনি জানান। তাই সহজ শর্তে ব্যাংক ঋন অথবা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি এগ্রো পার্ক করতে চান। যেন দর্শনার্থীরা আরও সহজভাবে বাগান পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারেন পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে জানান।
সরেজমিনে বাগান পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে ১৫ রকমের ফলের চাষ করছেন তিনি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মালটা, কমলা, আপেল, ডালিম, কদবেল, আমড়া ও আম অন্যতম। প্রায় ৮ বিঘা জমিতে রয়েছে বিভিন্ন জাতের মালটা ও কমলার চাষ। চলতি মৌসুমে তার বাগানে মালটার ও কমলার বাম্পার ফলন হয়েছে জানান উদ্যোক্তা হানিফ। ইতিমধ্যে তিনি বাজারজাত করতে শুরু করেছেন। সাইজে তুলনামুলক বড় ও স্বাদে সুমিষ্ট হওয়ায় স্থানীয় বাজারে মাল্টা ও কমলার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মৌসুমে ২৬৫টি গাছে ফল এসেছে এবং একেক গাছে ৮০-৮৫কেজি মাল্টার উৎপাদন হয়েছে বলে তিনি জানান। নিজ জেলার চাহিদার পাশাপাশি পাশর্^বর্তী জেলা নাটোর, নওগা, চাপাইনবাবগঞ্জ এর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ফলের দোকান ও খুচরা ক্রেতা সরাসরি বাগান ও অনলাইনে মাল্টা, কমলা, আমসহ বাগানের ফল ক্রয় করে থাকে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় ফলজ হচ্ছে একটি সাইটাস জাতীয় ফসল। এ ফসলের উৎপাদন খরচ খুবই কম। কীটনাশক সারসহ অন্যান্য সারের ব্যবহার খুবই কম। গাছের চারা ঠিকমতো পরিচর্ষা করতে পারলে চারা লাগানোর তিন বছর থেকে বিঘা প্রতি প্রায় ৫ লক্ষ টাকার ফল বিক্রয় করতে পারবে বলে জানা যায়। এবিষয়ে হানিফকে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান। #