ধর্ম ডেস্ক: মানুষের সুস্থতা-অসুস্থতা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। আল্লাহ মানুষকে সুস্থতা ও অসুস্থতা দিয়ে পরীক্ষা করেন। তাই অসুস্থ হলে মানুষের কর্তব্য হলো আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। অসুস্থতা থেকে রক্ষা পেতে এবং সুস্থতা ও শক্তি লাভ করতে রাসুল (সা.) উম্মতকে দোয়া শিখিয়েছেন এবং নিজেও আমল করেছেন। যেমন—
১. রাসুল (সা.) একবার এক অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলেন। তিনি দেখলেন, সে পুষ্টিহীনতায় হাড্ডিসার হয়ে গেছে। নবীজি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি আল্লাহর কাছে কি কোনো দোয়া করেছিলে? সে বলল, হ্যাঁ। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলাম, হে আল্লাহ! আমার পরকালের শাস্তি আপনি আমাকে দুনিয়াতেই দিয়ে দিন। নবীজি আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতা কি কারও আছে? তুমি এখন থেকে এ দোয়া করতে থাক—‘রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনইয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়া কিনা আজাবান নার’ অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রেহাই দিন।’ দেখা গেল, এর বরকতে আল্লাহ তাকে সুস্থতা দান করেছেন। (মুসলিম ২৬৬৮)।
২. হজরত আবু বাকরাহ (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) সকাল-সন্ধ্যা এ দোয়াটি পড়তেন— ‘আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সাময়ি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাসারি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা।’ অর্থ, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে শারীরিক সুস্থতা দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমার কানের সুস্থতা দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমার চোখের সুস্থতা দান করুন। আপনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। হে আল্লাহ! কুফরি এবং দারিদ্র্য থেকে আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! কবরের আজাব থেকে আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি ব্যতীত আর কোনো মাবুদ নেই।’ (আবু দাউদ: ৫০৯০)।
৩. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) এই বলে দোয়া করতেন—‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাস সিহহাতা, ওয়াল ইফফাতা, ওয়াল আমানাতা, ওয়া হুসনাল খুলুকি ওয়ার রিজা বিল কাদরি’, অর্থ, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সুস্থতা, পবিত্রতা, আমানতদারিতা, চরিত্রমাধুর্য এবং তাকদিরের প্রতি সন্তুষ্টি কামনা করি।’ (কানজুল উম্মাল: ২/৩৬৫০)
৪. হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এই দোয়া করতেন—‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুযামি ওয়া মিন সাইয়িল আকসাম’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি শ্বেতরোগ, কুষ্ঠরোগ, উন্মাদ রোগ ও যাবতীয় খারাপ রোগব্যাধি থেকে।’ (আবু দাউদ: ১৫৫৪)
৫. হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এই বলে দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল জু-য়ি, আইন্নাহু বিসাদ দাজিয়ু ওয়া আউজুবিকা মিনাল খিয়ানাতি, ফা ইন্নাহা বিসাতিল বিতানাতু’, অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষুধা থেকে পানাহ চাচ্ছি, কারণ ক্ষুধা অত্যন্ত নিকৃষ্ট সঙ্গী। আমি আপনার কাছে খেয়ানত থেকে পানাহ চাচ্ছি, কারণ এটি অত্যন্ত নিকৃষ্ট ধরনের কাজ।’ (আবু দাউদ: ১৫৫৪)।
মিজানুর রহমান, মাদ্রাসা শিক্ষক