অনলাইন ডেস্ক : প্রকৃতি বদলের সাথে জেলার আম বাগানে সবুজ পাতার ফাঁকে আমের সোনালি মুকুলের ছড়াছড়ি। জেলার সর্বত্র আম বাগানে মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ মুখরিত। আমের ব্যাপক ফলন লক্ষ্যে চাষীরা ব্যস্ত গাছের পরিচর্যায়।
দিনাজপুর হটিকালচার বিভাগের ফল নিয়ে গবেষণা নিয়োজিত সহকারী পরিচালক জাহিদুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ১০ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারের জেলায় বাম্পার আমের ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, এখন নতুন ভ্যারাইটির আমের চারা সৃজন করে আম চাষীরা আমের ফলন পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ পেতে শুরু করেছে। আমের চারা রোপণের এক বছরের মধ্যে ওই চারা গাছে আম ধরতে শুরু করেছে। ৫ বছর বয়সের চারা গাছে যে পরিমাণ আম ঝুলে রয়েছে, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। ফল নিয়ে গবেষণায় দেশের কৃষি বিশেষজ্ঞরা উন্নত ফলনশীল আমের ভ্যারিটি সৃষ্টি করেছে। দিনাজপুরে এসব নতুন ভ্যারাইটির আম গাছে গত কয়েক বছর থেকে বিপুল পরিমাণ আমের ফলন হচ্ছে। নতুন ভ্যারিটির আম খেতে খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি। ফলে এসব আমের চাহিদা দিনাজপুরসহ সারা দেশেই ব্যাপক ভাবে বেড়েছে ।
তিনি বলেন, গত বছর দিনাজপুর জেলায় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ অর্জিত হয়েছিল। ফলন হয়েছিল প্রায় ৫ লক্ষ মেট্রিক টন আম। আমের বাগান ছাড়াও এ জেলার বাড়ির চারপাশে এবং পরিত্যক্ত জায়গাতে আমের গাছগুলোতে ব্যাপক হারে আমের ফলন হচ্ছে। সব মিলিয়ে জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত, দিনাজপুর জেলায় আমের বাগান ও সর্বত্রই মুখরিতে থাকে পাকা আমের সরবরাহে।
চলতি বছর জেলায় গত বছরের তুলনায় ৮৭৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ বেশি হয়ে মোট ১০ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন ভ্যারাইটির আম কাটিমন, ব্যানানা ম্যাংগো, বারি-১,বারি-২,বারি-৩ ও বারি-৪, ব্যাপক হারে আমের বাগান অর্জিত হয়েছে। এসব ভ্যারাইটির আমের বাগানে মৌসুমের শুরুতেই ব্যাপক হারে মুকুল ছেয়ে গেছে। অনেক গাছে আমের গুটি এসে গেছে। এখন বাগানিরা তাদের আমের গাছের ফল ধরে রাখতে পরিচর্যাসহ বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের স্প্রে প্রয়োগ করছেন। এছাড়া দেশি জাতের আম রুপালি, হাড়িভাঙ্গা, ছাতাপরা, গোপালভোগ, মিশ্রিভোগ, ফজলিসহ বিভিন্ন ধরনের আমের চাষ এ জেলাতে ব্যাপক হারে অর্জিত হয়েছে।
তিনি জানান জেলা ১৩ টি উপজেলাতেই এখন আম চাষের রমরমা অবস্থান রয়েছে। আমের ফলন যেমন ভালো হয়, তেমনি বাজারে চাহিদাও রয়েছে। এ জেলার আম দেশের সমগ্র এলাকাতেই মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাইকারেরা নিয়ে যায়। এখানে আম বাগানগুলো দেশের মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলার আম ব্যবসায়ী পাইকারিরা আগাম বাগানগুলো দুই-তিন বছর মেয়াদে ফল ক্রয় করে নিয়েছে। এখন বাগান ক্রয় করা পাইকারেরা মৌসুমের শুরু থেকে আম বাগানে পানি সেচসহ ভিটামিন ওষুধ প্রয়োগ ও আম গাছে ফল ধরে রাখতে স্প্রে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে দিনাজপুর সদরে নশিপুর গ্রামে আম বাগানের ফল ক্রয় করে নিয়েছে পাইকার আমজাদ আলী ও শরিফুল ইসলাম। তাদের দু’জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর তিন বছর মেয়াদি তারা দু’জন মিলে ৬টি আম বাগানের ফল আগাম ক্রয় করে নিয়েছে। তারা ৬ টি আম বাগান তিন বছর মেয়াদি ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে ফল ক্রয় করেছে। গত বছর ওই ৬ টি বাগানে তাদের খরচ বাদে ১০ লক্ষ টাকা অর্জন হয়েছে। আগামী দু’বছর তারা যে টাকা দিয়ে বাগান ক্রয় করেছে। তার দ্বিগুণ ৩০ লক্ষ টাকার আম বিক্রি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বাগানের পরিচর্যা শুরু করেছেন।
সূত্র : বাসস