শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন
জরুরী বিজ্ঞপ্তি
দৈনিক বর্তমান দেশ সংবাদ এ সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ৭৮/৪/ সি তৃতীয় তলা, কাজলা ব্রীজ-উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। ফোন ০২-২২৩৩৪২১৪১,  মুঠোফোন :  ০১৮১৭-৫৩০৯৫২।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে দেশের প্রত্ন সম্পদ

  • আপডেট এর সময় : বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫
  • ২১ বার পঠিত হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক:

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে দেশের প্রত্ন সম্পদ। ফলে প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটগুলো থেকে প্রত্নসম্পদ চুরি ও পাচারের ঝুঁকি বেড়েছে। সীমান্ত দিয়ে পাচারের সময় গত কয়েক মাসে মূল্যবান পাথরের মূর্তিসহ বেশকিছু প্রত্নসম্পদউদ্ধার হয়েছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে যা উদ্ধার হয়েছে, পাচার হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষ করে আগস্টে বিগত সরকারের পতনের পর সীমান্ত কয়েকদিন পুরোপুরি অরক্ষিত থাকাকালে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর প্রত্ন ও শিল্পসম্পদ পাচার হয়ে গেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রত্নতত্ত্ববিদদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশ থেকে প্রত্নসম্পদের পাশাপাশি দেশের মূল্যবান শিল্পসম্পদও পাচারের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিগত সরকারঘনিষ্ঠ অভিজাতদের অনেকের বাড়ি থেকে প্রচুর শিল্পসম্পদ লুট হয়েছে। নানা হাত ঘুরে সেগুলো দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আর দুর্লভ ওসব প্রত্ন ও শিল্পসম্পদ একবার দেশের বাইরে চলে গেলে তা ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা নেই।

সূত্র জানায়, গত আগস্ট থেকে পরের পাঁচ মাসে সীমান্তে অন্তত নয়টি মূল্যবান পাথরের মূর্তি উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে আগস্টে দুটি, সেপ্টেম্বরে একটি, অক্টোবরে চারটি, নভেম্বরে একটি ও ডিসেম্বরে একটি মূর্তি পাচারের সময় উদ্ধার করেছে বিজিবি। ওসব মূর্তির অধিকাংশই বেনাপোল, নওগাঁ ও পঞ্চগড় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে। সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি টাস্কফোর্সের অভিযানে পঞ্চগড়ের মীরগড়ের ডোকরাপাড়া থেকে সাড়ে ২৪ কেজি ওজনের মূল্যবান একটি কালো পাথর উদ্ধার করা হয়। তাছাড়া সম্প্রতি র‌্যাবের নীলফামারীর একটি আভিযানিক দল দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে একটি মূল্যবান পাথরের বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধার করে আর ১৩ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় উদ্ধার হয় মূল্যবান কালো পাথরের আরেকটি বিষ্ণুমূর্তি।

সূত্র আরো জানায়, প্রত্নসম্পদ পাচারের ঘটনাগুলো এ মুহূর্তে উত্তরবঙ্গে সবচেয়ে বেশি ঘটছে। বিশেষ করে দিনাজপুর ও আশপাশের জেলাগুলোর সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে প্রচুর প্রত্নসম্পদ পাচার হচ্ছে। ওই অঞ্চলের কয়েকটি জেলায় প্রাচীন আমলে বিভিন্ন সময়ে নানা জনপদ গড়ে উঠেছে। ওসব এলাকা প্রত্নসম্পদেও বেশ সমৃদ্ধ। আবার জেলাগুলোর সঙ্গে ভারতের বিস্তৃত সীমান্ত এলাকার বড় একটি অংশ অরক্ষিত। যে কারণে প্রত্নবস্তু পাচারকারীরা ওই অঞ্চলে এখন বেশি সক্রিয়। সেখান দিয়ে পাচার হওয়া প্রত্ন নিদর্শনগুলো সীমান্তের ওপারে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট এলাকায় গিয়ে জমা হয়। ওই এলাকাটিও প্রাচীন নিদর্শনের জন্য বিখ্যাত। সেখানে বেশকিছু বিহার রয়েছে। ফলে সেখান দিয়ে পাচার করা তুলনামূলক সহজ।

এদিকে প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত না হওয়া দেশের প্রত্নসম্পদ সুরক্ষার পথে বড় বাধা। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে গেছে। এদেশে দুইভাবে প্রত্নসম্পদ বা নিদর্শন সংরক্ষণ করা হয়। সরকারিভাবে ও কমিউনিটি ভিত্তিতে। সরকারি তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন জাদুঘর, বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, ট্রেজারিগুলোতে বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শন সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত থাকে। আর কিছু নিদর্শন ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে যেমন বিভিন্ন উপাসনালয়, জমিদারবাড়ি, গ্রন্থাগার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত থাকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এর অনেক নিদর্শনই নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে। আবার প্রত্নসম্পদ নিদর্শন সংরক্ষণে যে আইন করা হয়েছে, সেখানেও এগুলোর সুরক্ষায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে যথাযথভাবে সংজ্ঞায়িত বা সুস্পষ্ট করা হয়নি। প্রত্নসম্পদ নিদর্শন সংরক্ষণ আইনের যুগোপযোগী পরিবর্তন-পরিবর্ধন না হওয়ার কারণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক সময় ওসব বিষয়ে উদাসীন হয়ে থাকেন। বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপনা, শিল্পকলা, চিত্রকলা, ভাস্কর্য, মুদ্রা, শিলালিপি, তাম্রশাসন, মৃৎপাত্র, পাথরের গুটিকা থালা, পোড়ামাটির ফলক, প্যানেল ও মূর্তি আমাদের জাতীয় পরিচিতির নিদর্শন। এগুলো আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী।

অন্যদিকে এ বিষয়ে বিজিবির উপমহাপরিচালক (মিডিয়া) কর্নেল মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম জানান, সীমান্তে সব ধরনের চোরাচালান রোধে বিজিবি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত এলাকাগুলোয় নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমেও পাচার হতে যাওয়া প্রত্নসম্পদ উদ্ধার করা হয়। আর যারা ওসব মূল্যবান সম্পদ পাচার প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র এআইজি ইনামুল হক সাগর জানান, প্রত্নসম্পদ ও শিল্পকর্ম দেশের ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ। এ ধরনের সম্পদ রক্ষায় পুলিশ সব সময়ই সচেষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রত্নসম্পদের নিরাপত্তা রক্ষায় জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যরা সচেষ্ট রয়েছেন।

সংবাদটি আপনার সোস্যাল নেটওয়ার্কে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ