মোঃ কামরুল ইসলাম টিটু :স্টাফ রিপোর্টার:
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার তালিকায় বাংলাদেশের ১৯ টি উপকূলীয় জেলার মধ্যে বাগেরহাট উল্লেখযোগ্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগের
কারনে প্রতিবছর এই এলাকার প্রাণ ও প্রকৃতির বিপুল পরিমান ক্ষতি সাধন হচ্ছে। বাগেরহাট জেলার নয়টি উপজেলারমধ্যে তিনটি উপজেলা
একেবারে নদী ও সুন্দরবন ঘেঁষা। তার মধ্যে শরণখোলা উপজেলা অন্যতম যার প্রায়-১৫১.২৩ বর্গ কিলোমিটারএলাকার মধ্যে সুন্দরবন অংশে
পড়েছে ৭৮.৪২বর্গকিলোমিটার। জাতীয়ভাবে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী জনসংখ্যার হার যেখানে ২৪.৯%, সেখানে ১,১০,৪০০ জনসংখ্যার
শরণখোলা উপজেলায় এখনো দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী জনসংখ্যার হার ৫২.৫%।এই দরিদ্রতার মূল কারণ হলো প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়,
জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততাসহ বিভিন্নপ্রাকৃতিক দূর্যোগে অত্র এলাকার মানুষের জীবন ও জীবিকার সীমাহীন ক্ষতি। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, ২০০৭
এবং ২০০৯ সালের সিডর ও আইলার ক্ষয়ক্ষতি, যার চিহ্ন উপকূলবাসী এখনো বহন করে বেড়াচ্ছে। সিডর ও আইলার মোট ক্ষতির পরিমান ছিল
১০০,০০,০০০/- টাকা এবং প্রায় ১০,০০০ লোক বাস্দচ্যুত হয়েছিল অন্যান্য এলাকায়। সুতরাং এই এলাকার টেকশই উন্নয়নের জন্য প্রযোজন
সমন্বতি পরিকল্পনা এবং চাহিদাভিত্তিক বরাদ্দ।
জনাব ইমরান হোসেন রাজিব, চেয়ারম্যান, ৪নং সাউথখালী ইউনিয়ন, শরণখোলা, বাগেরহাট বলেন, ”সরকার চাইলে স্থানীয় সরকারকে আরো
শক্তিশালী করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় এলাকার উদ্ভুত সমস্যার টেকশই সমাধান করতে পারে। ওয়ার্ড সভা থেকে উঠে আসা
প্রান্তিক মানুষের প্রয়োজনগুলো যদি খাতভিত্তিক নির্দিষ্ট করে ইউনিয়ন পরিষদের বাজেটে আনা যায় এবং অনুরুপভাবে বরাদ্দ পাওয়া যায়, তাহলে
এলাকার মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে”।বিভিন্ন এনজিও পিছিয়ে
পড়া জনগোষ্ঠীদের কন্ঠস্বর বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহন বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। ওয়ার্ড
পর্যায়ে সিবিও, ইউনিয়ন পর্যায়ে সিএসও এবং উপজেলা পর্যায়ে সিএসও নেটওয়ার্ক গঠনের মাধ্যমে ওয়ার্ড সভা, বাজেট সভা এবং অন্যান্য কাজে
স্থানীয় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের অন্তর্ভূক্ত করার মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের কাজে গতি আনার চেষ্টা করছে।
কে এম মিজানুর রহমান, ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ২ নং খোন্তাকাটা ইউনিয়ন, শরণখোলা, বাগেরহাট বলেন, ”ওয়ার্ড সভা হতে জেন্ডার
বান্ধব ও জলবায়ু সংবেদনশীল খাতে যে চাহিদা গুলো আসে অনেক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা সেগুলো বাদ রেখে রাস্তাঘাটের চাহিদা বেশি
প্রয়োজন মনে করেন”। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের উন্নয়নের জন্য জেন্ডার বান্ধব ও
জলবায়ু সংবেদনশীল খাতের বাজেট বরাদ্দ কম হয় এবং তার বাস্তবায়নও কম পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পের অধীনে
প্রদানকৃত সহায়তাগুলো অত্র এলাকার জন্য খুবই অপ্রতুল।
জনাব সুদীপ্ত কুমার সিংহ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শরণখোলা, বাগেরহাট বলেন, ”জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এই এলাকার
নারী জনগোষ্ঠী, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও সুপেয় খাবার পানির অভাবে নারীরা ভূক্তভোগী। দিনের বেশীলভাগ সময় পানি জোগাড়ে চলে যায়”। এ প্রসঙ্গে
জনাব আশফাক হোসেন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্, এক অনুষ্ঠানে বলেন, ”এই লবনাক্ত পানি পানের
ফলে নারী বন্ধ্যাত্ব বরণ করছে এবং পুরুষরা হারিয়ে ফোলছে বাবা হবার ‣মতা। শুধু কি তাই? এই লবনাক্ত পানি পানের ফলে নানা ধরনের রোগ
যেমন ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটের পীড়া সহ নানাবিধ রোগ-শোক তাদের শরীরে বাসা বঁাধছে”।
সালমা বেগম, সিএসও নেটওয়ার্ক সদস্য, শরণখোলা উপজেলা বলেন, ”জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর
উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদ এবং আমরা সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন এর সদস্যগন মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করে সহজেই এই সমস্যা থেকে
বের হয়ে আসতে পারবো। তবে সরকারকে ইউনিয়ন পরিষদের বাজেটকে খাতভিত্তিক, জলবায়ু সংবেদনশীল ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বান্ধব।