অতীতে ঈদ মানেই নতুন গান, নতুন সুর আর জনপ্রিয় শিল্পীদের কণ্ঠে শ্রোতাদের মুখে মুখে ফিরত অজস্র গানের লাইন। তবে সময় বদলেছে। বদলে গেছে গানের মাধ্যম, প্রকাশভঙ্গি আর শ্রোতাদের আগ্রহের ধরণ। এই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদেও সংগীতাঙ্গনে দেখা যায়নি তেমন কোনো জোয়ার। গান হয়েছে অনেক, প্রকাশও হয়েছে বহু প্ল্যাটফর্মে, কিন্তু আলোচনায় জায়গা করে নিতে পারেনি খুব বেশি কিছু।
ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এবারের ঈদে শতাধিক গান প্রকাশ পেয়েছে। একক ও দ্বৈত গান থেকে শুরু করে সিনেমা ও নাটকের গান—বিচিত্র ধারায় কাজ করেছেন জনপ্রিয় ও নবীন শিল্পীরা। তবুও এই গানগুলোর মধ্যে খুব কম সংখ্যকই শ্রোতাদের মনে দাগ কেটেছে। সোশ্যাল মিডিয়া বা গণমাধ্যমে তেমন কোনো গান ভাইরাল হয়নি, যার প্রভাব পড়েছে ঈদের গানের সামগ্রিক আলোচনায়।
গানের আলোচনা না হওয়া নিয়ে মতভেদ রয়েছে শিল্পীদের মধ্যেও। বর্ষীয়ান শিল্পী বাপ্পা মজুমদার বলেন, “গান নিয়ে তেমন মাতামাতি আগে কখনোই ছিল না। ভালো গান বোঝার জন্য চুপচাপ শুনতে হয়। সব গান ভাইরাল হওয়ার নয়।”
আরেক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর বলেন, “আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব শ্রোতাশ্রেণি আছে। তারা নিয়মিত আমাদের গান খুঁজে শুনছেন। প্রচারণার জন্য সিনেমার মতো বড় বাজেটের সুযোগ আমাদের নেই, তাই ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া দিয়েই আমরা শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাই।”
নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি এর ব্যাখ্যা, “সাড়া না পাওয়ার কথা বলা ঠিক নয়। এখন অনেক শিল্পী গান করছেন, অনেক শ্রোতা শুনছেন। কিন্তু সব গান ভাইরাল হবে—এমন চিন্তা করাও ঠিক নয়। সব গান তো আর মোড়ে মোড়ে বাজানোর মতো না!”
এবারের ঈদে গান প্রকাশ করেছেন হাবিব ওয়াহিদ, ইমরান মাহমুদুল, কণা, ন্যান্সি, মিলা, সালমা, মনির খান, কর্ণিয়া, বিউটি, পুতুল, বাঁধন সরকার পূজা, লিজা, কাজী শুভসহ আরও অনেকে। সিনেমা ও নাটকের গানেও ছিল পরিচিত কণ্ঠের সরব উপস্থিতি। তবুও সেই গানগুলো শ্রোতাদের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলতে পারেনি।
গানের পাশাপাশি এবার ইত্যাদিতে প্রথমবারের মতো গান গেয়েছেন অভিনেতা সিয়াম আহমেদ ও জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। তবে ‘তুমি আমায় ভালোবাসো’ শিরোনামের গানটি জনপ্রিয়তার দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছে গত ঈদের তাহসান-ফারিণ জুটির ‘রঙে রঙে রঙিন হব’ গানের চেয়ে।
ধ্রুব মিউজিক স্টেশন, জি সিরিজ, সিডি চয়েস, গানচিল, সিএমভি, অনুপম মিউজিক, সুরঞ্জলী ও লেজার ভিশনের মতো শীর্ষ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো ঈদ উপলক্ষে প্রচুর গান প্রকাশ করেছে। পুরোনো তারকাদের পাশাপাশি উঠে আসা নতুন শিল্পীরাও ছিল এই তালিকায়। কিন্তু এত আয়োজনের পরও গণমানুষের কণ্ঠে গানগুলোর প্রতিধ্বনি মেলেনি।
অন্যবারের চেয়ে এবারের ঈদে সিনেমার গান কিছুটা এগিয়ে ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। একাধিক সিনেমার গানে শ্রোতারা আগ্রহ দেখিয়েছেন, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যায়নি। শিল্পী ও নির্মাতারা এটিকে ইন্ডাস্ট্রির জন্য আশাজাগানিয়া মনে করছেন।
ইমরান মাহমুদুল বলেন, “গান শুধু ঈদের জন্য নয়, এটা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে দরকারি। আমরা সারাবছরই গান করছি, ঈদে সেটার অংশ মাত্র।”
মিলা ইসলাম বলেন, “সব সময় একরকম যায় না। আলোচনা কম হচ্ছে মানে এই নয় যে গান হচ্ছে না বা শ্রোতা নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের পথ চলতে হয়।”