সারা দেশে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালগুলোতে মামলা বিচারাধীন ছিল প্রায় চার লাখ। তার মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে প্রায় দেড় লাখ মামলা ঝুলছে। একই সঙ্গে ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনালগুলোতে সাড়ে আট হাজারেরও বেশি বিচারাধীন মামলা রয়েছে। তাছাড়া মামলা জটের খাতায় গত পাঁচ বছরে প্রায় ১ লাখ মামলা নতুন করে যোগ হয়েছে। আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ভূমি জরিপের মামলার জট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেই। বরং আটকে আছে ১৩টি নতুন ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল ও ৫৪টি স্বতন্ত্র আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য বিচারক ও সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সৃজনের প্রস্তাব। তাতে দুর্ভোগ বিচারপ্রার্থীদেরই পোহাতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিগত ১৯৮৪ সালে সারা দেশে বিআরএস জরিপ শুরু হয়। জরিপ শেষ হওয়ার পর নানা ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দেয়। অদক্ষ মাঠ কর্মকর্তা, কর্মচারীদের দুর্নীতি ও অবহেলায় ভুলে ভরা এসব ভূমি জরিপের খেসারত জমির মালিকদের গুনতে হচ্ছে। জরিপের পর্চা আর ম্যাপে হাজার হাজার ভুল। কারো জমি পর্চায় আছে তো ম্যাপে নেই, ম্যাপে আছে তো পর্চায় নেই। আবার ম্যাপে থাকলেও শত বছর ধরে যে চৌহদ্দিতে মালিক সম্পত্তি ভোগদখল করে আসছে সেভাবে নেই। এসব কারণে নানা রকমের বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমে ওসব বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিভিন্ন দেওয়ানি আদালতে মামলা হতো। তারপর সরকার ২০১২ সালে সারা দেশে ৪২টি ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করে। বর্তমানে দেশে ৫৮টি স্বতন্ত্র ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। তবে আইনে আপিল ট্রাইব্যুনালের কথা বলা থাকলেও দেশে একটিও স্বতন্ত্র ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল নেই। যদিও ২০২০ সালের অক্টোবরে হাই কোর্ট ৯০ দিনের মধ্যে ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের নির্দেশ দেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনটি সর্বশেষ ২০২৩ সালে সংশোধন করে। আইন সংশোধনের আগে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে রিট করতে হতো। আইন সংশোধন করে জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারকদের আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার সুযোগ রেখে আইন সংশোধন করা হয়।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০২৩ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধনের পর ৫৪টি স্বতন্ত্র ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের জন্য বিচারক ও সহায়ক জনবলের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাত্র ২৬ জন জেলা জজসহ সহায়ক কর্মচারীর পদ সৃষ্টির প্রস্তাব অনুমোদন করে। এখন ওই প্রস্তাব অর্থ বিভাগে আটকে আছে।
এদিকে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের একজন সাবেক বিচারক জানান, ভূমি জরিপের মামলাগুলোতে সরাসরি সাধারণ মানুষের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এসব মামলা নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেশি। বর্তমানে জেলা জজরা অন্য মামলার পাশাপাশি ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনালের মামলা করছেন। ভূমি জরিপের বিরোধ নিষ্পত্তিতে স্বতন্ত্র আপিল ট্রাইব্যুনাল জরুরি। একই সঙ্গে মামলা বিবেচনায় বিভিন্ন জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা প্রয়োজন। মামলাজট কমাতে এর বিকল্প নেই।
অন্যদিকে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, ভূমি জরিপের বিরোধ একটি জটিল বিষয়। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতি জেলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাইব্যুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করতে হবে। বিচারক ও সহায়ক জনবল নিয়োগে পদ সৃষ্টিতে বেশি সময় লাগলে মামলার জট আরো বাড়বে। সরকারকে বিশেষ ব্যবস্থায় দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।
সম্পাদক : হালিমা খাতুন, নির্বাহী সম্পাদক : মুন্সি মোঃ আল ইমরান। MAA 23 Multimedia Limited এর পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৭৮/৪/ সি তৃতীয় তলা, কাজলা ব্রীজ-উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। ফোন ০২-২২৩৩৪২১৪১, মুঠোফোন : ০১৮১৭-৫৩০৯৫২, ০১৯৭৯-৭৯৯১৪৬। ইমেইল : dailybartomandeshsangbad@gmail.com
© All rights reserved © Maa 23 Multimedia Limited