দেশের গ্যাস খাতে সিস্টেম লসে বছরে বিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। মূলত পুরনো পাইপলাইন, লিকেজ, চুরি ও অপরিকল্পিত অবকাঠামোর কারণে কারিগরি ত্রুটিতে এ ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। দেশে ৬টি কোম্পানি পাইপলাইনে গ্যাস বিতরণ করে। ওসব কোম্পানির মধ্যে তিতাসের গ্রাহক সংখ্যাই বেশি। কোম্পানিটির আওতায় মোট ২৮ লাখ ৮৩ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। গ্রাহক ও গ্যাসের ব্যবহার ভেদে কোম্পানিটির সিস্টেম লস জানুয়ারির হিসাবে ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আর এর বাইরে বাকি পাঁচটি কোম্পানির গ্রাহক সংখ্যা সীমিত। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে গ্যাসের ব্যবহার ও গ্রাহক বিবেচনায় বিতরণ পর্যায়ে এখন ১১ শতাংশের কাছাকাছি সিস্টেম লস। যদিও বিতরণ কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের দাবি- সিস্টেম লস এখন গড়ে সাড়ে ১০ শতাংশের মতো। বাংলাদেশে গ্যাসের সিস্টেম লস ভারতের তিন গুণ ও পাকিস্তানের দ্বিগুণ। পাকিস্তানের গ্যাস খাতের সিস্টেম লস এখন ৫ শতাংশের কিছু বেশি। আর ভারতে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ খাতে সিস্টেম লস গড়ে ৩-৪ শতাংশের বেশি নয়। দেশের গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর সিস্টেম লস অভাবনীয় হারে বেড়ে যাওয়ায় গ্যাস খাতে প্রতি বছর ১ বিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছর বিতরণ কোম্পানিগুলোর সিস্টেম লস সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশে পৌঁছেছে। বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সিস্টেম লস যথাক্রমে ১০ দশমিক ৫৩ ও ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। মূলত সিস্টেম লসের নামে এ গ্যাসের সিংহভাগ চুরি হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া কারিগরি ত্রুটি ও অপরিকল্পিত পাইপলাইন নির্মাণের কারণেও গ্যাস খাতে সিস্টেম লস কম নয়। তবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার আর দক্ষতা নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশে সিস্টেম লস ৩-৪ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব। সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগের প্রকাশিত রোডম্যাপে দেশের গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর সিস্টেম লস ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে তিতাস ও বাখরাবাদ কোম্পানি এ উদ্যোগের বাইরে থাকছে। যদিও পুরনো পাইপলাইন ও অবৈধ সংযোগ বিবেচনায় তিতাস ও বাখরাবাদের সিস্টেম লস সর্বনিম্ন ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, গ্যাস খাতের সিস্টেম লসে সরকারের প্রতি বছর আর্থিকভাবে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে। ওই ক্ষতির কারণে এ খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কারিগরি ক্ষতির নামে গ্যাস অপচয় হয়েছে ১৩৭ কোটি ঘনমিটার। এলএনজি আমদানি ও সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ প্রতি ঘনমিটারে ৭৯ টাকা ৩৪ পয়সা। ওই হিসাবে গ্যাস অপচয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা বেশি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর সিস্টেম লস কমিয়ে আনতে রোডম্যাপ তৈরি করেছে। তাতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সিস্টেম লস সন্তোষজনক মাত্রায় কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোম্পানিগুলোর জন্য পুরস্কারের পাশাপাশি ব্যর্থ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও রেখেছে জ্বালানি বিভাগ।
এদিকে বৈশ্বিকভাবে গ্যাস খাতের সিস্টেম লসের গ্রহণযোগ্য মাত্রা বিতরণ খাতে দশমিক ২০ থেকে দশমিক ৩০ শতাংশ। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুরনো পাইপলাইন ও লিকেজ বিবেচনায় স্থানীয়ভাবে আদর্শিক সিস্টেম লস বিবেচনা করা হয় ২ শতাংশ। যদিও এখন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিতরণ কোম্পানিগুলোকে সিস্টেম লসের হার বিবেচনায় ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছে। বিশেষ করে তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সিস্টেম লস অনেক বেশি। তাদের এক বছরের মধ্যে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। গ্যাস খাতের দক্ষতা বাড়িয়ে এ ধরনের অপচয় কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গ্যাস উৎপাদন-সঞ্চালন ও বিতরণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিস্টেম লস কমিয়ে এনেছে। দেশে এ খাতে দক্ষতা ও উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। সিস্টেম লস কমানো গেলে গ্যাস খাতের বিপুল পরিমাণ ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিতরণকারী কোম্পানি তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ জানান, গ্যাসের সিস্টেম লস কমাতে রোডম্যাপ দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। সেখানে সিস্টেম লসের একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেগুলো মোকাবেলা করেই তিতাস সিস্টেম লস সন্তোষজনক অবস্থানে নামিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করবে।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, গ্যাসের সিস্টেম লস কমিয়ে আনতে একটা রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রত্যেকটি বিতরণ কোম্পানিকে সিস্টেম লস কমিয়ে আনতে হবে। সিস্টেম লস কমিয়ে আনা কোম্পানিগুলোর জন্য পুরস্কার দেয়া হবে। যারা ব্যর্থ হবে তাদের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। গ্যাসের সিস্টেম লসের বড় একটি অংশ অপচয়। এ অপচয় রোধে সফটওয়্যার ডেভেলপ করা হচ্ছে। তাছাড়া অভিযান চালাতে ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করবেন।
সম্পাদক : হালিমা খাতুন, নির্বাহী সম্পাদক : মুন্সি মোঃ আল ইমরান। MAA 23 Multimedia Limited এর পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৭৮/৪/ সি তৃতীয় তলা, কাজলা ব্রীজ-উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। ফোন ০২-২২৩৩৪২১৪১, মুঠোফোন : ০১৮১৭-৫৩০৯৫২, ০১৯৭৯-৭৯৯১৪৬। ইমেইল : dailybartomandeshsangbad@gmail.com
© All rights reserved © Maa 23 Multimedia Limited