জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেল আবারও আইনের মুখোমুখি। এক কলেজছাত্রীকে অপহরণ, আটকে রেখে ধর্ষণ, মারধর এবং পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে হুমকির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘ ছয় মাস ধরে ওই তরুণীকে আটকে রেখেছিলেন নোবেল।
ঘটনার সূত্রপাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও থেকে, যেখানে দেখা যায়—এক তরুণীকে মারধর করে সিঁড়ি দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন নোবেল। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করা হলে পুলিশ ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টারের বাসা থেকে সোমবার (১৯ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে রাত ২টার দিকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় নোবেলকে।
মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে নোবেলকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়া উদ্দিন আহমেদের আদালতে হাজির করে তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন জানায় ডেমরা থানার পুলিশ। অন্যদিকে নোবেলের আইনজীবীরা জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান জানান, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইডেন কলেজের ছাত্রী। তিনি নিজেই বাদী হয়ে মামলা করেন (মামলা নম্বর ৩২)। অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের ১২ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থেকে স্টুডিও দেখানোর কথা বলে নোবেল তাকে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান। এরপর কয়েকজন অজ্ঞাত সহযোগীর সহায়তায় তাকে জিম্মি করে রাখা হয়। ওই সময় মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলা হয় এবং নেশাগ্রস্ত অবস্থায় শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, নোবেল ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন। এমনকি, মৌখিকভাবে বিয়ে করেছেন বলেও দাবি করেছেন নোবেল, যদিও এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুরাদ হোসেন জানান, নোবেলের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী চিকিৎসা ও সুরক্ষা সহায়তা নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) রয়েছেন।
নোবেল প্রথম আলোচনায় আসেন ২০১৯ সালে ভারতীয় টিভি চ্যানেল জি বাংলার সংগীতবিষয়ক প্রতিযোগিতা ‘সা রে গা মা পা’-তে অংশ নিয়ে। প্রতিভাবান এই শিল্পী শুরুতে দর্শকদের মন জয় করলেও, পরবর্তীতে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বারবার আলোচনায় আসেন।
২০২৩ সালের ১৯ মে অগ্রিম টাকা নিয়ে গান না গাওয়ার অভিযোগে মতিঝিল থানায় এক ব্যক্তি নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। একই বছর কুড়িগ্রামে এক কনসার্টে ‘অসংলগ্ন আচরণে’র কারণে দর্শক ক্ষুব্ধ হয়ে জুতা ও পানির বোতল নিক্ষেপ করলে অনুষ্ঠান পণ্ড হয়।
পরে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও কনসার্টে উপস্থিত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও নতুন করে আবারও গুরুতর অভিযোগের মুখোমুখি হলেন এই শিল্পী।
সম্পাদক : হালিমা খাতুন, নির্বাহী সম্পাদক : মুন্সি মোঃ আল ইমরান। MAA 23 Multimedia Limited এর পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৭৮/৪/ সি তৃতীয় তলা, কাজলা ব্রীজ-উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। ফোন ০২-২২৩৩৪২১৪১, মুঠোফোন : ০১৮১৭-৫৩০৯৫২, ০১৯৭৯-৭৯৯১৪৬। ইমেইল : dailybartomandeshsangbad@gmail.com
© All rights reserved © Maa 23 Multimedia Limited