যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, টেক্সাসের ভয়াবহ বন্যায় যে ধ্বংসযজ্ঞ তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, তা তার জীবনে দেখা ‘সবচেয়ে ভয়ানক অভিজ্ঞতা’। এটিকে তিনি ‘শতাব্দীর দুর্যোগ’ বলে অভিহিত করেছেন।
গত সপ্তাহে ভয়াবহ ফ্ল্যাশ ফ্লাড বা আকস্মিক বন্যায় রাজ্যটিতে কমপক্ষে ১২০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ডজনখানেক শিশু রয়েছে।
কারভিল থেকে এএফপি জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প দুর্গত পরিবারের সদস্য, উদ্ধারকর্মী ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে শুক্রবার সেন্ট্রাল টেক্সাসের ‘হিল কান্ট্রি’ এলাকায় পৌঁছান। অতিবৃষ্টির ফলে ফুলে-ফেঁপে ওঠা গুয়াডালুপে নদী এখানকার বহু ঘরবাড়ি, শিবির, গাড়ি ও মানুষ ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
কারভিল শহরের এক গোলটেবিল বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘এটা খুবই ভয়াবহ। আমি এমন কিছু আগে কখনও দেখিনি। অনেক হারিকেন, অনেক টর্নেডো দেখেছি, কিন্তু এমন কিছু নয়। এটা খুবই খারাপ।’
সঙ্গে থাকা সাংবাদিকদের প্রশ্নে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, এখন উচিত হচ্ছে উদ্ধারকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা।
কালো ব্যানারে ‘টেক্সাস স্ট্রং’ লেখা একটি টেবিলে বসে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এই ঘটনায় গোটা দেশের হৃদয় ভেঙে গেছে। আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে এখানে থাকতে চেয়েছি। ফার্স্ট লেডিও এখানে আসতে চেয়েছেন।’
বন্যার পানি কীভাবে হঠাৎ আছড়ে পড়ে তা বোঝাতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘এটা যেন প্রশান্ত মহাসাগরের একটা বিশাল ঢেউ, যেটা সার্ফিংয়ের দুনিয়ার সবচেয়ে সাহসী মানুষকেও ভীত-সন্ত্রস্ত করত।’
এর আগে ট্রাম্প দমকল বিভাগ, কোস্টগার্ড ও উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন এবং গভর্নর গ্রেগ অ্যাবটের কাছ থেকে ব্রিফিং নেন। ঘটনাস্থলের পাশেই ছিল গুয়াডালুপে নদী, যেখানে পড়ে থাকা গাছ ও উল্টে যাওয়া ট্রেইলার ছিল ভয়াবহ বন্যার চিহ্নস্বরূপ।
বন্যায় এখনও ১৭০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছেন, যাদের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন শিবিরে যাওয়া পাঁচজন কিশোরীও রয়েছে।
উদ্ধারকাজের অষ্টম দিনে এখনও কোনো জীবিত ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এতে করে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘এটা ‘শতাব্দীর দুর্যোগ’। কেউই এমনটা আশা করেনি।’ তবে বন্যায় ফেডারেল এজেন্সিগুলোতে তার করা বাজেট কাটছাঁটের প্রভাব নিয়ে ওঠা প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি প্রধান ক্রিস্টি নোয়েম, যিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন, বলেন উদ্ধারপ্রক্রিয়া ছিল ‘দ্রুত ও কার্যকর’।
তবে প্রশ্ন উঠেছে- গুয়াডালুপে নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে জরুরি সর্তকতা পাঠাতে বিলম্ব হয়েছিল কেন? কিছু ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টার দেরি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি বন্যা সতর্কতা ব্যবস্থা চালুর পক্ষে।
তিনি বলেন, ‘এমন ঘটনায় ভবিষ্যতে কোনো বিপুল পরিমাণ পানি এলেই যেন সিস্টেম থেকে অ্যালার্ম বেজে ওঠে- এমন কিছু করা প্রয়োজন।’
এই ভয়াবহ বন্যা সাম্প্রতিক সময়ের যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রাণঘাতী দুর্যোগ, যা ফেমা নামে পরিচিত ফেডারেল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা বিলুপ্ত করার ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে বিতর্ক আবার জাগিয়ে তুলেছে।
ট্রাম্প গত সপ্তাহে বিপর্যয় ঘোষণা স্বাক্ষর করার পর ফেমা তাদের কার্যক্রম শুরু করে।
তবে ফেমার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রেসিডেন্ট কিছু বলেননি। বুধবার এক সরকারি পর্যালোচনা সভায় ক্রিস্টি নোয়েম বলেন, ‘ফেমাকে তার বর্তমান রূপে বিলুপ্ত করা উচিত।’
‘ফ্ল্যাশ ফ্লাড অ্যালি’ নামে পরিচিত গুয়াডালুপে নদীর ধার ঘেঁষে কার কাউন্টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই দুর্যোগে ৩৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যারা ৪ জুলাই ছুটির সময় সেখানে ছিল।
স্থানীয়ভাবে সতর্কতা পাঠানোর প্রাথমিক পর্যায়ের বিলম্ব নিয়ে এখন অনেক তথ্য সামনে আসছে।
তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন সত্ত্বেও তারা যথাসময়ে ও সঠিকভাবে সতর্কতা পাঠিয়েছেন।
এবিসি নিউজ জানায়, জুলাই ৪ তারিখে ভোর ৪:২২ মিনিটে ইনগ্রাম শহরের একজন দমকলকর্মী কার কাউন্টি শেরিফ দপ্তরকে জানায় যে হান্ট শহরের বাসিন্দাদের সতর্ক করা উচিত। তবে প্রথম সতর্কতা কার কাউন্টির ‘কোডরেড’ সিস্টেমে ৯০ মিনিট পর, অর্থাৎ অনেক দেরিতে পৌঁছায়।
কিছু ক্ষেত্রে সতর্কবার্তা পৌঁছায় সকাল ১০টার পর, যখন অনেকেই ইতোমধ্যে ভেসে গেছেন।
এই নদীর তীরবর্তী গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্প ‘ক্যাম্প মিস্টিক’-এ সর্বাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, যেখানে ২৭ জন কিশোরী ও প্রশিক্ষকের মৃত্যু হয়।
সম্পাদক : হালিমা খাতুন, নির্বাহী সম্পাদক : মুন্সি মোঃ আল ইমরান। MAA 23 Multimedia Limited এর পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৭৮/৪/ সি তৃতীয় তলা, কাজলা ব্রীজ-উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। ফোন ০২-২২৩৩৪২১৪১, মুঠোফোন : ০১৮১৭-৫৩০৯৫২, ০১৯৭৯-৭৯৯১৪৬। ইমেইল : dailybartomandeshsangbad@gmail.com
© All rights reserved © Maa 23 Multimedia Limited