আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
থাইল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্তে চলমান তীব্র সংঘর্ষে অন্তত ৩২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে থাইল্যান্ডের সঙ্গে ‘অবিলম্বে’ অস্ত্রবিরতি চেয়েছে কম্বোডিয়া।
সংঘর্ষের তৃতীয় দিনে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে এক জরুরি বৈঠকের পর এমন মন্তব্য করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূত ছেয়া কিও। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতে এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ডে ১৯ জন (এর মধ্যে ১৩ জন বেসামরিক), আর কম্বোডিয়ায় ১৩ জন (৫ সেনা ও ৮ বেসামরিক) নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক।
ছেয়া কিও বলেন, ‘কম্বোডিয়া অবিলম্বে শর্তহীন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। আমরা বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।’
থাইল্যান্ডের জাতিসংঘ দূত চার্দচাই চাইয়াওয়াইবিদ পাল্টা আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কম্বোডিয়াকে অবিলম্বে সব ধরনের আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে এবং আন্তরিকভাবে সংলাপে ফিরতে হবে।’
শনিবার সকালে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অভিযোগ করে, থাইল্যান্ডের সেনারা পার্সাত প্রদেশে পাঁচটি ভারী কামানের গোলা নিক্ষেপ করেছে। এটিকে “অযৌক্তিক ও পূর্বপরিকল্পিত আগ্রাসন”হিসেবে নিন্দা জানায় তারা।
অন্যদিকে থাই সেনাবাহিনী জানায়, কম্বোডিয়ার বাহিনী তাদের প্রতিবেশী প্রদেশ ট্রাট-এ হামলা চালায়, যা পরে ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে প্রতিহত করা হয়।
এদিকে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এই সংঘাতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই, যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যুদ্ধবিরতির জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। আসিয়ানের চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম আলোচনার আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রও ‘তাৎক্ষণিক সংঘর্ষ বন্ধ, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান’-এর আহ্বান জানিয়েছে।
থাইল্যান্ডের দাবি, সংঘর্ষ শুরু হয়েছে কম্বোডিয়ার সেনারা সীমান্তে থাই বাহিনীর ওপর ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালানোয়। কম্বোডিয়ার অভিযোগ, থাই সেনারা পূর্বের এক চুক্তি লঙ্ঘন করে সীমান্তবর্তী একটি খেমার-হিন্দু মন্দির এলাকায় অগ্রসর হওয়ায় সংঘর্ষ শুরু হয়। দুই দেশের এই বিরোধের ইতিহাস শত বছরের বেশি পুরনো, ফরাসি উপনিবেশ-পরবর্তী সময়ের সীমানা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল।
এর আগেও কয়েক দফা সীমান্ত সংঘর্ষে উভয় পক্ষের সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। সাম্প্রতিক উত্তেজনা মে মাসে একটি সংঘর্ষে এক কম্বোডীয় সেনার মৃত্যুর পর শুরু হয়, যা দুই দেশের সম্পর্ককে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে নিয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, দুই দেশের মধ্যে এই সীমান্ত বিরোধের ইতিহাস শতাব্দী পেরিয়েছে, যার শিকড় ঔপনিবেশিক আমলের মানচিত্র-সংক্রান্ত দ্বন্দ্বে। চলতি বছরের মে মাসে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হওয়ার পর উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সর্বশেষ থাই সেনাদের ওপর পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইনে হতাহতের ঘটনায় সংঘাত আরও তীব্র হয়, যদিও কম্বোডিয়া অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ায় নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে এবং ব্যাংককে নিযুক্ত কম্বোডিয়ার দূতকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে
জাতিসংঘ মহাসচিব উভয়পক্ষকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে মালয়েশিয়া, যেটি উভয় দেশের অন্তর্ভুক্ত আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের নেতৃত্ব দিচ্ছে, সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনও ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিকোর্নদেজ বালানকুরা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘থাইল্যান্ড আলোচনার জন্য প্রস্তুত, মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতা থাকলে তা আরও ভালো হয়।’
থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা গেছে, দেশটির সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরিবারগুলো এখন মন্দির, স্কুল ও বিভিন্ন মিউনিসিপ্যালিটি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। কম্বোডিয়া জানিয়েছে, তাদেরও অন্তত ২৩ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সম্পাদক : হালিমা খাতুন, নির্বাহী সম্পাদক : মুন্সি মোঃ আল ইমরান। MAA 23 Multimedia Limited এর পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৭৮/৪/ সি তৃতীয় তলা, কাজলা ব্রীজ-উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। ফোন ০২-২২৩৩৪২১৪১, মুঠোফোন : ০১৮১৭-৫৩০৯৫২, ০১৯৭৯-৭৯৯১৪৬। ইমেইল : dailybartomandeshsangbad@gmail.com
© All rights reserved © Maa 23 Multimedia Limited