আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
নেপালের প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগে বাধ্য করা ও সংসদ ভবনে অগ্নিসংযোগসহ ভয়াবহ সহিংসতার পর বুধবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঠমান্ডুর রাস্তায় সেনাসদ্যরা টহল দিয়েছে। হিমালয়ান দেশটিতে গত দু’দশকের মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা। কাঠমান্ডু থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ শুরু হয়। তবে সরকারের দমন অভিযানে অন্তত ১৯ জনের প্রাণহানির পর বিক্ষোভ দেশব্যাপী সহিংসতায় রূপ নেয়। এসময় বিভিন্ন সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
হঠাৎ করে এমন অরাজক পরিস্থিতিতে অনেকেই স্তম্ভিত হয়ে পড়েছেন। নেপালের সেনাবাহিনী সতর্ক করে বলেছে, ৩ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।
এএফপি প্রতিবেদকের বরাতে বলা হয়, সরকারি ভবন, রাজনীতিবিদদের বাসভবন, সুপারমার্কেটসহ বিক্ষোভকারীদের টার্গেট করা স্থাপনাগুলো থেকে বুধবারও ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। এছাড়াও পুড়ে যাওয়া গাড়ি ও টায়ারের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়েছিল রাস্তায় ।
‘আজ পরিস্থিতি শান্ত, সেনারা সব রাস্তায় টহল দিচ্ছে’, অস্থায়ীভাবে বসানো একটি চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশি করার সময় বুধবার এ কথা বলেন এক সেনা সদস্য। তবে গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি তিনি।
মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা ৭৩ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কেপি শর্মা ওলির বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি দেশটির চারবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পরে তিনি রাজনৈতিক সমাধানের পথ সুগম করতে পদত্যাগ করেন। তবে তার বর্তমান অবস্থান জানা যায়নি।
নেপালের সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল মঙ্গলবার রাতে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় সংলাপের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশের শান্তিপূর্ণ সমাধান দেওয়ার জন্য আমরা বিক্ষোভে জড়িত সব পক্ষকে আন্দোলন স্থগিত করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানাই।’
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ ঘটনাটিকে ‘দেশটির অস্থির গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসও সহিংসতা যাতে না বাড়ে সেজন্য সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক এক বিবৃতিতে এ কথা জানান।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ দিপেন্দ্র ঝা এএফপি’কে জানান, বিক্ষোভকারীদের বিশ্বাসযোগ্য নেতা এবং সেনাবাহিনীকে নিয়ে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পথ তৈরি করতে হবে।
ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক আশীষ প্রসাদনও একই ধরনের মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এখন দ্রুত একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। সেখানে এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি, যাদের প্রতি নেপালি জনগণ, বিশেষত তরুণদের আস্থা রয়েছে।’
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী জনগোষ্ঠী নেপালের জনসংখ্যার প্রায় ৪৩ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বেকারত্ব প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি এবং মাথাপিছু জিডিপি মাত্র ১,৪৪৭ মার্কিন ডলার।
গত শুক্রবার ফেসবুক, ইউটিউব ও এক্সসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয় সরকার। এর আগে ২৬টি নিবন্ধনবিহীন প্ল্যাটফর্মে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তবে টিকটক বন্ধ করা হয়নি। সেখানে ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলোতে সাধারণ নেপালিদের সংগ্রামের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসবহুল পণ্য ও বিদেশে ছুটি কাটানোর তীব্র বৈপরীত্য প্রকাশ পেতে থাকে।