বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫৪ অপরাহ্ন
জরুরী বিজ্ঞপ্তি
দৈনিক বর্তমান দেশ সংবাদ এ সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ৭৮/৪/ সি তৃতীয় তলা, কাজলা ব্রীজ-উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। ফোন ০২-২২৩৩৪২১৪১,  মুঠোফোন : ০১৭১২-৫২২৫৩৭, ০১৮১৭-৫৩০৯৫২।

জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন চায় বিএনপি, ভিন্নমত জামায়াত ও নাগরিক কমিটির

  • আপডেট এর সময় : বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ২ বার পঠিত হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধি: এত দিন ‘যৌক্তিক সময়ের’ মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি করে আসছিল বিএনপি। এখন সে জায়গা থেকে সরে এসে দলটি আগামী জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলল। রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের নতুন সময় উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে কার্যত অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর নির্বাচনী চাপ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করল দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। তবে তাদের এ দাবির সঙ্গে একমত নয় জাতীয় নাগরিক কমিটি। ভিন্নমত রয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনেরও।

গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা মনে করি, এ বছরের মাঝামাঝি অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এ কারণে আমরা সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবস্থা নিতে পারি।’

 

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন মনে করে, কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ছাড়া তড়িঘড়ি নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে আত্মঘাতী। এর মধ্য দিয়ে আগের ফ্যাসিবাদী শাসন ফেরার পথ সুগম করবে। জাতীয় নাগরিক কমিটি বলেছে, তারাও দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায়। কিন্তু সেটা হতে হবে গণপরিষদ নির্বাচন।

বিএনপির নেতারা বলছেন, যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়ে গেছে, তাই সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনার পর দলটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচনের দাবি তুলবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অংশ নেন। মূলত স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতেই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। জানা গেছে, এ সভায় সরকারের দিক থেকে নানাভাবে জাতীয় নির্বাচন প্রলম্বিত করার আশঙ্কার কথা জানান একাধিক সদস্য।

নির্বাচনের সময়সীমা ঠিক করবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো: জাতিসংঘের দূত
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো
এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক বিষয়ে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা সন্দিহান। তাঁরা এটাকে নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন।

এসব নিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এ রকম ক্রিটিক্যাল সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া অন্য নির্বাচন করার চিন্তাটা আসে কোত্থেকে? নির্বাচন পেছানোর চিন্তাটাই বা আসে কোত্থেকে? কারণ, এটা তো আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) প্রথম কাজ। আপনি দেশকে যদি একটা লাইনে…রেললাইনের ওপরে তুলতে চান, তাহলে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নাই।’

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীও ‘যৌক্তিক সময়ের’ মধ্যে সংসদ নির্বাচনের কথা বলে আসছিল। তারা সংস্কার শেষ করে ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আশা করে। তবে দলটি সংস্কার অসম্পূর্ণ রেখে তাড়াহুড়া নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে নয়।

 

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করেন ব্রিটিশ এমপি রূপা হক। ঢাকা, ৪ জানুয়ারি
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচনে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হবে না। আবার রাষ্ট্রকাঠামোর পুরোপুরি সংস্কার করা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়, এটাও আমরা বিশ্বাস করি। কিন্তু নির্বাচনটা নিরপেক্ষ করতে যতটুকু আইনকানুন সংস্কার সম্ভব, সেটা করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাই। আমরা ১৫ বছর অপেক্ষা করেছি। এখন তিন-পাঁচ মাস বেশি লাগলেও জাতি কাঙ্ক্ষিত সংস্কার শেষে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়।’

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি তার জায়গা থেকে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। তবে আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার এবং নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরির জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া।’

গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক দিন পরেই নয়াপল্টনে সমাবেশ করে ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দাবি করেছিল বিএনপি। পরে অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কারের জন্য ‘যৌক্তিক সময়’ দিয়ে দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছিল দলটি। নির্বাচন প্রশ্নে আরেক ধাপ এগিয়ে গতকাল নতুন অবস্থান প্রকাশ করল বিএনপি।

২০২৫ সালের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে: জামায়াতের নায়েবে আমির
‘জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব’
৪ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) রূপা হককে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দুটি সম্ভাব্য সময়সীমার কথা বলেন। একটি ডিসেম্বর ২০২৫ বা ২০২৬ সালের মাঝামাঝি। তবে তিনি এ-ও বলেছিলেন, নির্বাচনের সময়সূচি নির্ভর করছে জনগণ কতটুকু সংস্কার চায়, তার ওপর। প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্য নিয়ে সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির সভায় দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এত বিলম্বিত করার কোনো কারণ নেই।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা মনে করি, যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেছে এবং গভর্ন্যান্সের মধ্যে মোটামুটি একটা স্ট্যাবিলিটি (স্থিতিশীলতা) এসেছে। বুধবার সংস্কার-সংক্রান্ত কমিশনের প্রতিবেদন এসে যাবে। সুতরাং মনে হয় না আরও বিলম্বিত করার কোনো কারণ আছে। যত বিলম্ব হচ্ছে, ততই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

 

সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আগে সংসদ নির্বাচন চাই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না। কারণ, এখন তো পুরো দেশের, পুরো জাতির ফোকাসটা হচ্ছে এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপরে। ক্রাইসিসটা ওই জায়গায়। গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন হতে পারেনি। মানুষ সে জন্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথটাকে পূরণ করতে চায়।’

এ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের বুঝতে হবে, স্থানীয় সরকার দেশ চালায় না। দেশ চালায় কিন্তু জাতীয় সংসদ, আইন প্রণয়ন করে জাতীয় সংসদ, গণতন্ত্রের মূল বিষয়টা হচ্ছে জাতীয় সংসদ…এটা কার্যকর হলে গণতন্ত্র ফাংশনাল হয়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগসহ বিভিন্ন কাজ এক-দুই মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে তৈরি আছে। তারা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে, দুটি নির্বাচন একসঙ্গে সম্ভব নয়। সুতরাং জাতির স্বার্থে প্রয়োজন এই নির্বাচন (সংসদ নির্বাচন)।

অন্তর্বর্তী সরকারকে ন্যূনতম সংস্কারের সুযোগ দিতে হবে: জামায়াত সেক্রেটারি
গণপরিষদ নির্বাচন চায় নাগরিক কমিটি
জুলাই-আগস্টের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিএনপির দাবি সম্পর্কে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, যদি নির্বাচন কমিশন, দুদকসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার সম্পন্ন হয়। সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পর আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাই। কিন্তু সেটা অবশ্যই হতে হবে গণপরিষদ নির্বাচন। এ মুহূর্তে গণপরিষদ নির্বাচন হচ্ছে নির্বাচনের একমাত্র যৌক্তিক পন্থা।’

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না—বিএনপির এই অবস্থানের বিষয়ে সামান্তা শারমিন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন, দুদকসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে কি না, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি কার্যকর ও শক্তিশালী কি না, জনগণের পক্ষে কাজ করবে কি না, সেটা বোঝার একটা উপায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এ জন্য আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলেছি। আমরা এখনো এ অবস্থানেই আছি।’

ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাচ্ছিলাম সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন হোক, নির্বাচনের জন্য সেই পরিবেশ তৈরি হোক। এখনো সে পরিবেশ তৈরি হয়নি। এ ছাড়া সংস্কারের জন্য কতগুলো কমিশন করা হয়েছে। এখনো কমিশনের প্রস্তাবগুলো পরিষ্কারভাবে পাইনি। তারা কাজ করছে, প্রস্তাব দেবে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে, তারপর সিদ্ধান্ত হবে। বিএনপি সেদিকে কর্ণপাত করছে না, তাদের এজেন্ডাই হচ্ছে শুধু নির্বাচন।’

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই–আগস্টের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব কি না, এটা নির্বাচন কমিশন বা সরকার সঠিক বলতে পারবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কী হিসাব করে বলেছেন, জানি না। তবে সংবিধান সংস্কারের যে কথাগুলো এসেছে, যেমন নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন, সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা—এসব কাজ জুলাই-আগস্টের মধ্যে সম্ভব না। এখন যদি এমন হয়, সংস্কার যতটুকু দরকার করো, একটা নির্বাচন দাও, তাহলে ভিন্ন কথা।’

 

সংবাদটি আপনার সোস্যাল নেটওয়ার্কে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ