মোয়াজ্জেম হোসেন জুয়েল : মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে গত কয়েক দিন ধরে ব্যবসায়ী দুই ভাইয়ের মধ্যে চরম উত্তপ্ত ছড়াচ্ছে। যে কোনো মুহুর্তে বড়ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। এরই মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন দুই ভাই।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে ভবেরচর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন বড় ভাই ব্যবসায়ী উজ্জ্বল ভূঁইয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন দুপুর একটার দিকে ভবেরচর হাসপাতাল এলাকায় বড় ভাইয়ের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করে পাল্টা অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী আশরাফুল ভূঁইয়া।
সংবাদ সম্মেলন ব্যবসায়ী উজ্জ্বল ভূঁইয়া দাবি করেন, গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়ন চরপাথালিয়া গ্রামে শ্রীনগর মৌজায় ক্রয়সূত্রে দুই শতাংশ ও পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে ১.২৫ শতাংশ মোট ৩.২৫ শতাংশের জায়গা এবং উক্ত জায়গা নির্মিত বিল্ডিংটির মালিক তিনি।
অপরপক্ষ আশরাফুল ভূঁইয়া দাবি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং আইনজীবীর উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকে বিষয়টি সমাধান হয়। নোটারি পাবলিকে মাধ্যমে লিখিত ভাবে বিল্ডিংটি দুই ভাগে করে দুই ভাইকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সে অনুপাতে বিল্ডিংটির অর্ধেক তিনি মালিক। বিল্ডিংটির এই মালিকানা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা।
ব্যবসায়ী উজ্জ্বল ভূঁইয়া বলেন, ‘ঢাকা এবং গজারিয়ায় আমার ব্যবসা রয়েছে। ক্রয়সূত্রে আমি ২ শতাংশ সম্পত্তির মালিক। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী পৈত্রিকসূত্রে ওয়ারিশ হিসেবে ১.২৫ শতাংশ সম্পত্তির মালিক আমি। সে হিসেবে আমার সম্পত্তির পরিমাণ দাড়ায় ৩.২৫ শতাংশ। উক্ত জায়গা থেকে আমি আড়াই শতাংশ সম্পত্তির উপরে একটি বাড়ি নির্মাণ করি। বাড়িটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর বণ্টননামা না থাকার সুযোগে আমার ছোট ভাই আশরাফুল ভূঁইয়া দাবি করতে থাকে এই জায়গাটি তার এবং বাড়ি নির্মাণের অর্ধেক খরচ সে দিয়েছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সন্ত্রাসীদের দিয়ে সে বাড়িটি দখল করার পায়তারা করতে থাকলে আমি বাধ্য হয়ে আদালতে একটি মামলা করি। আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়ার পর কাজ না হওয়ায় সে আমার মা এবং এক বোনকে আমার বিরুদ্ধে উসকে দেয়। দীর্ঘ বছর ধরে আমি আমার মাকে লালন পালন করছি, আমার টাকায় তাকে দুইবার হজ করিয়েছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো ভালো হাসপাতালে তার চিকিৎসা করিয়েছি। সেই মাকে দিয়ে আমার নামে আদালতে ভরণপোষণের মামলা করিয়েছে। আমার ছোট ভাই আমার সম্পত্তি দখল করতে চায়। আমার এক ছোট বোন ও তার স্বামী মিলে আমার গজারিয়ার ব্যবসা দখল করতে চায় আর আমার মা তাদের দ্বারা প্রভাবিত। এখন বলা হচ্ছে আমি নাকি আমার মাকে মারধর করেছি, বাসা থেকে টাকা-পয়সা লুট করেছি যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় আমার মা আমার সাথে ছিল। আপনাদের সবাইকে সাক্ষী রেখে আমি বলতে চাই আমার মায়ের সারা জীবনের ভরণ পোষণের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হোক। আমি তাকে মাথায় তুলে রাখবো’।
ব্যবসায়ী আশরাফুল ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার ভাই আপনাদের কাছে মিথ্যাচার করেছে। গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং আইনজীবীর উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকে বিষয়টি সমাধান হয়। নোটারি পাবলিকে মাধ্যমে লিখিতভাবে বিল্ডিংটি দুই ভাগে করে দুই ভাইকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সে অনুপাতে বিল্ডিংটির মাঝ বরাবর আমরা একটি দেওয়াল দেই। শর্ত অনুযায়ী দুজনের মামলার প্রত্যাহার করার কথা। আমার মা ভরণপোষণের মামলাটি প্রত্যাহার করলেও আমার বড় ভাই ১৪৫ ধারার মামলাটি প্রত্যাহার করেনি। এরপর গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) আমি আমার পরিবার নিয়ে ঢাকাতে গেলে আমার মা একা বাসায় ছিলো। এই সুযোগে ১০/১২জন সন্ত্রাসী নিয়ে আমার বড় ভাই জোরপূর্ব বাড়িতে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়। আমার বৃদ্ধ মাকে মারধর করে নগদ নয় লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং ১২ ভরি স্বর্ণালংকার লুটপাট করে নিয়ে যায়। পুরো ঘটনা ভিডিও করা আছে আপনারা চাইলে দেখতে পারেন’।
স্থানীয়দের দাবি সমস্যা নিরসন না হলে দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটতে পারে। থানা পুলিশের তৎপরতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সেখানকার জনমনে রয়েছে শঙ্কা।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ হয়েছে। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।