মোঃ নমশের আলম : শেরপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে শেরপুর সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শেরপুর সরকারি কলেজের সাবেক এজিএস জাকারিয়া বাদল (৪৭) এর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় সোহাগ আলম (৩৫) ও রুহুল নামে আরও দুইজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ।
২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়ার সময় পথিমধ্যেই তার (জাকারিয়া বাদল) মৃত্যু হয়।
শেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান রুপন ও নিহতের স্বজন রমজান আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) বিকেলে শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের ভীমগঞ্জ এলাকায় মাদ্রাসার সামনে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। জাকারিয়া বাদল এর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
জাকারিয়া বাদলের স্বজন ও ছাত্রদল কর্মী রমজান আলী জানান, কামারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক লুৎফর রহমানের সাথে বাদলের দীর্ঘদিন হতে দ্বন্দ্ব চলছিলো। সম্প্রতি জেলা বিএনপির বিবদমান গ্রুপিংয়ের জেরে স্থানীয় ওই দুই নেতার সম্পর্ককে আরও জটিল করে তোলে।
এদিকে হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও কৃষকলীগ নেতা নুরে আলমের সাথেও তার অনেক আগে থেকেই রাজনৈতিক বৈরিতা রয়েছে। বাদলকে দমন করতে সম্প্রতি শেরপুর জেলা কারাগারে থাকা সাবেক চেয়ারম্যান নূরে আলমের সাথে সাক্ষাৎ করেন লুৎফর রহমান। ওই দুজন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আগাম পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বিএনপি নেতা লুৎফর জেলে গিয়ে কৃষক লীগ নেতা নূরে আলমের লোকজনের সাথে সাক্ষাৎ ও গোপন মিটিং করে এলাকায় প্রতিপক্ষ বাদলকে দমানোর পরিকল্পনা করেন।
মঙ্গলবার বিকেলে জাকারিয়া বাদলসহ ৩ জন একটি মোটরসাইকেলে ভীমগঞ্জ বাজার থেকে বাড়ি ফিরছেন। এসময় পথে আগে থেকেই ওঁতপেতে থাকা নুরে আলম ও লুৎফরের অনুসারীরা ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের উপর অতর্কিত হামলা করে। ওইসময় বাদলসহ ৩ জনকেই এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায় তারা। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে শেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে বাদল ও সোহাগের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে প্রেরণ করেন। সোহাগ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও বাদলের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় পাঠালে পথেই তার মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাবেক এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক লুৎফর রহমানের সাথে বিএনপি নেতা জাকারিয়া বাদলের বিরোধ চলে আসছে। এরই জের ধরে কৃষক লীগ নেতা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম চেয়ারম্যানের লোকজন লুৎফরের লোকজনের সাথে যুক্ত হয়ে বাদলের উপর হামলা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ৫ আগস্টের পরে শেরপুরে বিএনপির গ্রুপিং এর বলি হলো বিএনপি এই পরীক্ষিত কর্মী বাদল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে কামারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক লুৎফর রহমান বলেন, বাদল আমার দলেরই লোক। আমি কেন তার উপর হামলা করবো? বাদলের অনেক শত্রু আছে। তাদেরই কেউ হয়ত হামলা করেছে।
এ ব্যাপারে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম জানান, এলাকায় যৌথ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ হামলাকারীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে।