উপমহাদেশের দুই চিরবৈরী প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন যুদ্ধ পরিস্থিতি চতুর্থ দিনে পৌঁছেছে, ঠিক তখনই বিশ্ব এক দমবন্ধ উত্তেজনায় নজর রাখছিল সীমান্ত পরিস্থিতির দিকে। পাল্টাপাল্টি হামলা, ক্রমবর্ধমান সামরিক মোতায়েন এবং বাগযুদ্ধের আবহে ভয়াবহ সংঘাতের শঙ্কা যখন ঘনীভূত, সেই মুহূর্তেই নাটকীয় এক মোড় নেয় পরিস্থিতি—যার কেন্দ্রে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আসা একটি গোপন ও বিপজ্জনক গোয়েন্দা তথ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত শুক্রবার সকালে হোয়াইট হাউস একটি আশঙ্কাজনক গোয়েন্দা তথ্য হাতে পায়, যা থেকে ধারণা করা হয় যে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে সপ্তাহান্তেই। এর পরই দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অবহিত করেন এবং দ্রুত কূটনৈতিক তৎপরতায় নামেন।
ভ্যান্স ফোন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এবং সরাসরি সতর্ক করেন যে সংঘাত অব্যাহত থাকলে তা নিয়ন্ত্রণহীন যুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে পারে। মোদিকে তিনি উৎসাহ দেন পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন এবং উত্তেজনা প্রশমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণে।
এই ফোনালাপের পরপরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফসহ শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাতভর টেলিফোনে আলোচনা চালিয়ে যান। মার্কিন প্রশাসন যুদ্ধবিরতির খসড়ায় সরাসরি জড়িত না থাকলেও তারা পর্দার আড়ালে গুরুত্বপূর্ণ একটি যোগাযোগ সেতুবন্ধন তৈরি করে দেয়—যা আলোচনার পথ প্রশস্ত করে।
সবকিছু মিলিয়ে শনিবার বিকেলেই আসে সেই কাঙ্ক্ষিত ঘোষণা। ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে জানান—দুই দেশ পূর্ণমাত্রার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এই ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভারত এবং পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করে, বিকাল পাঁচটা থেকে স্থল, নৌ ও আকাশপথে সব রকমের সামরিক তৎপরতা বন্ধ রাখা হচ্ছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সরাসরি ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেও, ভারতের পক্ষ থেকে এমন কোনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়নি। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সাংবাদিকদের জানান, দুই দেশ সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে এই চুক্তিতে পৌঁছেছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে জানান, এই যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাজ্যও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। যদিও এ বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই যুদ্ধবিরতি আন্তর্জাতিক কূটনীতির একটি সাফল্য এবং প্রমাণ করে—সঠিক সময়ে নেওয়া কৌশলগত পদক্ষেপ বিশ্বকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। গোয়েন্দা তথ্যের গুরুত্ব, নেতৃত্বের দৃঢ়তা এবং কূটনৈতিক দৃশ্যপট দ্রুত পরিবর্তনের উদাহরণ হয়ে থাকবে এই ঘটনা।
বিশ্ব এখন কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই যুদ্ধবিরতি কতটা স্থায়ী হবে এবং ভবিষ্যতে এমন সংকটে কূটনীতির ভাষা কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে?