দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী একাধিক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের অন্তর্বর্তী নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে তার অবিলম্বে পদত্যাগ এবং তার দেশের-বিদেশে অবস্থান সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দীর্ঘ দেড় দশকের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতন্ত্র আন্দোলনের সময় ড. খলিলুর রহমানের কোনও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল না। অথচ তিনি হঠাৎ করে নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পেয়েছেন, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সন্দেহ ও প্রশ্ন ওঠেছে। রিজভী বলেন, ‘রাষ্ট্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো সুযোগ নেই,’ এবং বলেন, ‘ড. খলিলুর রহমানের বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য দেশের জনগণের সামনে আনতে হবে।’
শুক্রবার (২২ মে) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আরও জানান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাম্প্রতিক মন্তব্য বিশেষত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে বিস্ময়, উদ্বেগ ও ক্ষোভ তৈরি করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, ড. খলিলুর রহমান তারেক রহমানের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা বিনষ্ট এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদান করেছেন। এ ধরনের বক্তব্য রাষ্ট্রের উচ্চ পদে থাকা একজনের জন্য আত্মগরিমার প্রদর্শন নয়, বরং দুর্নীতিপূর্ণ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ মে) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে ড. খলিলুর রহমান তারেক রহমানের বিদেশে অবস্থান নিয়ে মন্তব্য করেন, যেখানে তিনি বলেন, ‘কেবলমাত্র আমি আমেরিকায় থেকেছি বলে আমাকে যদি বলা হয় আপনি বিদেশি নাগরিক, তাহলে কালকে তারেক রহমানকেও সে কথা বলতে হবে।’ রিজভী এ মন্তব্যকে ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ বলে উল্লেখ করে বলেন, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টার অংশ।
রিজভী অভিযোগ করেন, ‘মানবিক করিডোর’ নামে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়ে ড. খলিলুর রহমান বিতর্কিত মন্তব্য করে দেশের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কীভাবে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি, যাকে ‘কুশীলব’ হিসেবে অভিহিত করা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে আসীন হতে পারেন? তিনি দাবি করেন, এ ধরনের পরিস্থিতি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।
বিএনপির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের নেতা তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে নির্বাসিত জীবনে রয়েছেন, যেখানে তিনি দেশের জন্য কঠোর সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তার রাজনৈতিক অবস্থান ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অবৈধ ও বিভ্রান্তিমূলক প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে, যা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
রিজভী বলেন, ‘আমরা আর নতুন করে কোনো স্বৈরাচারী বা প্রভুত্ববাদের অধীনে থাকতে চাই না। দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে এমন বিতর্কিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য তুলে ধরার প্রয়োজন।’ তিনি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আহ্বান জানান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে ড. খলিলুর রহমানকে অবিলম্বে সরিয়ে দেশে-বিদেশে তার অবস্থান সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জনগণের সামনে উন্মুক্ত করতে।
বিএনপির এই পদক্ষেপের পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করা এবং রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা অক্ষুণ্ণ রাখা। রিজভীর কথায়, ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ নেই, জনমনে সৃষ্ট সন্দেহ দূরীকরণ জরুরি।’